ইসলামে বাথরুম ব্যবহারের বিধান

কীভাবে প্রস্রাব-পায়খানা বা টয়লেট ব্যবহার করতে হবে ইসলাম তার আদব বা শিষ্টাচার বলে দিয়েছে। নিম্নে এর সংক্ষিপ্ত সুন্নত-বিধান উপস্থাপন করা হলো-

১. প্রস্রাব-পায়খানা করার সময় মাথা ঢেকে রাখা। (বায়হাকি : ৪৫৬)। একেবারে খালি মাথায় টয়লেটে যাওয়া ঠিক নয়। কাপড় ইত্যাদি দ্বারা মাথা ঢেকে রাখার কথা সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেঈনদের থেকে প্রমাণিত। উরওয়া (রহ.) তার বাবা বিখ্যাত সাহাবি জুবায়ের (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, একবার আবু বকর সিদ্দিক (রা.) লোকজনের উদ্দেশে খুতবা দিতে গিয়ে বলেন, হে মুসলমানরা! তোমরা আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে লজ্জা বজায় রাখ। ওই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয়ই আমি যখন প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য লোকালয় থেকে দূরে যাই, তখন আমি আমার রবের প্রতি লজ্জাবনত হয়ে মাথা ঢেকে নিই। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১১৩৩)।

২. জুতা-স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে টয়লেটে যাওয়া। (তাবাকাতে ইবনে সাআদ : ১৮৫; কানজুল উম্মাল : ১৭৮৭২)।

৩. টয়লেটে প্রবেশের আগে এই দোয়া পড়া- বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল খুবসি ওয়াল খাবায়িস। অর্থ হে আল্লাহ! আমি নাপাকি ও দুষ্ট জিনের অনিষ্টতা থেকে তোমার পানাহ চাই। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ৫)।

৪. দোয়া পড়ার পর টয়লেটে আগে বাম পা প্রবেশ করানো। (আবু দাউদ : ৩২)।

৫. কেবলার দিকে মুখ বা পিঠ দিয়ে না বসা। (বোখারি : ১৪৪)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'পায়খানা-প্রস্রাব করার সময় কেবলামুখী হয়ে বা কেবলা পেছনে রেখে বসবে না।

৬. যথাসম্ভব বসার নিকটবর্তী হয়ে ছতর খোলা এবং বসা অবস্থায় প্রস্রাব-পায়খানা করা, দাঁড়িয়ে প্রস্রাব না করা। (নাসাঈ : ২৯; তিরমিজি : ১৪)।

৭. প্রস্রাব ও নাপাক পানির ছিটা থেকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বেঁচে থাকা। (বোখারি : ২১৮)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'তোমরা প্রস্রাব থেকে পবিত্রতা অর্জন করো। কেননা অধিকাংশ কবরের আজাব এ কারণেই হয়ে থাকে।' (দারাকুতনি : ৪৫৩, হাকেম পৃ. ১/১৮৩)।

৮. পানি খরচ করার আগে ঢিলা-কুলুখ (বা টয়লেট পেপার) ব্যবহার করা। (বায়হাকি : ৫১৭)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'মলত্যাগ করার পর তিনটি ঢিলা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে। এরপর পানি দ্বারা ধৌত করবে।' (ইবনে মাজা)।

৯. ঢিলা ও পানি খরচ করার সময় বাম হাত ব্যবহার করা। (বোখারি : ১৫৪)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যখন তোমরা টয়লেটে যাবে, তখন লজ্জাস্থানকে ডান হাতে স্পর্শ করবে না এবং ডান হাতে শৌচক্রিয়া করবে না।' (মুসলিম)।

১০. পেশাবের ফোঁটা আসা বন্ধ হওয়ার জন্য আড়ালে সামান্য চলাফেরা করা। (ইবনে মাজা : ৩২৬)। তবে এক্ষেত্রে দৃষ্টিকটু আচরণ না করা।

১১. যেখানে প্রস্রাব-পায়খানার জন্য নির্ধারিত কোনো জায়গা নেই, সেখানে এমনভাবে বসা যেন ছতর নজরে না পড়ে। (আবু দাউদ : ২)।

১২. প্রস্রাবের জন্য নরম বা এমন স্থান খুঁজে নেয়া যেখান থেকে প্রস্রাবের ছিটা শরীরে বা কাপড়ে না লাগে। (আবু দাউদ : ৩)।

১৩. ঢিলা-কুলুখ ব্যবহারের পর পানি ব্যবহার করা। (সহিহ ইবনে খুজাইমা : ৮৩)।

১৪. ডান পা দিয়ে বের হওয়া। (আবু দাউদ : ৩২)।

১৫. প্রবল বাতাসের দিকে মুখ করে প্রস্রাব করা নিষেধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'প্রস্রাব করার ইচ্ছা করলে, সেজন্য একটা উপযোগী স্থান খুঁজে নেবে। যেমন- পর্দার দিকে লক্ষ রাখবে এবং বাতাসের দিকে মুখ করে বসবে না।' (আবু দাউদ)।

১৬. অজু-গোসলের স্থানে বা স্থির পানিতে প্রস্রাব-পায়খানা করা নিষেধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'প্রবহমান নয়- এমন স্থির পানিতে প্রস্রাব করবে না। যেমন- পুকুর, হাউস ইত্যাদি। গোসলখানায় প্রস্রাব করবে না। কেননা, অধিকাংশ সন্দেহ এর দ্বারাই সৃষ্টি হয়ে থাকে।' (তিরমিজি)।

১৭. প্রস্রাব-পায়খানার ক্ষেত্রে অন্যান্য আদব শিক্ষা দিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'কোনো গর্তের মধ্যে প্রস্রাব করবে না। (আবু দাউদ)। মলত্যাগের সময় কথা বলবে না। (মুসনাদে আহমাদ)। পানির ঘাটে, রাস্তার মধ্যে, ছায়ার স্থানে প্রস্রাব-পায়খানা করবে না।' (আবু দাউদ)।

১৮. হাড্ডি, কয়লা, কাগজ, গাছের কাঁচা পাতা, খাদ্যদ্রব্য, শুকনো গোবর দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা নিষেধ। (তিরমিজি)।

১৯. প্রস্রাব করা অবস্থায় কেউ সালাম দিলে পবিত্রতা অর্জনের পর তার জবাব দেয়া মুস্তাহাব (যদি সালামদাতা উপস্থিত থাকে)। নতুবা প্রয়োজন সেরে এসে অজু বা তায়াম্মুম ছাড়াও জবাব দেয়া যাবে।

২০. বাইরে এসে এ দোয়া পড়া- গুফরানাকা আলহামদুলিল্লা হিল্লাজি আজহাবা আন্নিল আজা ওয়া আফানি। অর্থাৎ 'হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। আপনার হুকুমে প্রস্রাব-পায়খানা হয়ে যাওয়ায় যে স্বস্তি ও অফুরন্ত কল্যাণ লাভ হয়েছে, তার জন্য শুকরিয়া জানাচ্ছি। মাঝখানে কিছুক্ষণ আপনার শুকরিয়া আদায় করতে না পারায় আমি আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি।'

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.