সফলতার পাঁচ সূত্র

মাওলানা আবদুস সবুর

যাদের মধ্যে পাঁচটি গুণ আছে, আল্লাহ তায়ালা তাদের সম্পর্কে ঘোষণা দিয়েছেন, তারা হেদায়েতের ওপর আছে এবং তারাই সফলকাম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'যারা গায়েবের প্রতি ঈমান আনে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। এবং যারা ঈমান আনে বাণীর ওপর, যা তোমার প্রতি নাজিল করা হয়েছে এবং যা তোমার আগে নাজিল করা হয়েছে। আর আখেরাতের প্রতি তারা একিন রাখে। তারা তাদের রবের পক্ষ থেকে হেদায়েতের ওপর রয়েছে এবং তারাই সফলকাম।' (সূরা বাকারা : ৩-৫)।

এক. যারা আল্লাহকে না দেখে বিশ্বাস করে বা ঈমান বিল গাইব। আমরা তো আল্লাহকে দেখি না, আখেরাত দেখিনি, বেহেশত-দোজখ কিছুই দেখিনি। না দেখেই আল্লাহর প্রতি, আখেরাত, জান্নাত-জাহান্নাম ও কবর-মৃত্যু ইত্যাদির ওপর আমরা ঈমান এনেছি। এই 'না দেখে ঈমান আনা' এটা এক নম্বর গুণ।

দুই. যারা নামাজ কায়েম করে বা করে ইকামাতে সালাত। মুফাসসিররা বলেন, নামাজ কায়েম করার অর্থ হলো, নামাজের মধ্যে ১৩টি ফরজ, ১৫টি ওয়াজিব এবং ৫১টি সুন্নত আছে। এগুলো শিখে নিয়ে সূরা-কেরাত সহিহ করে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে পড়তে হবে। নিজের ছেলেমেয়েকে পড়ানোর জন্য তাকিদ দিতে হবে। এরপর অন্যকে দাওয়াত দিয়ে নামাজ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তাহলে নামাজ কায়েম হবে। অন্যথায় নয়।

আমি নামাজ পড়লাম, ছেলেমেয়ে পড়ে কিনা এটার খবরও জানি না। নামাজের মাসয়ালা সম্পর্কে আমার জ্ঞান নেই। নামাজের রুকু-সিজদা সঠিকভাবে করতে পারি না। তাহলে আমার 'নামাজ পড়া' তো হলো; কিন্তু 'নামাজ কায়েম' করা হলো না। কায়েম করা এক জিনিস আর পড়া আরেক জিনিস। এর জন্য ওলামায়ে কেরামের কাছে আসতে হবে। নামাজের ট্রেনিং নিতে হবে। নবী করিম (সা.) এর সুন্নত তরিকায় নামাজ কায়েম করতে হবে, তাহলে আমি সফলকাম। কিছু না থাকলেও আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ী আমি সফল।

তিন. আল্লাহ তায়ালার দেয়া রিজিক থেকে ব্যয় করা। আল্লাহ তায়ালা কাউকে কোটিপতি আবার কাউকে লাখোপতি বানিয়েছেন। আবার কাউকে গরিব বানিয়েছেন। সাধ্য অনুযায়ী যারা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে, আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ী তারা সফলকাম।

না দেয়ার নাম সফলতা নয়, দেয়ার নাম সফলতা। আল্লাহ তায়ালা আমাকে কামাই করার তৌফিক দিয়েছেন, আমি কামাব আর দেব। এটার নামই সফলতা। কিন্তু কামাই করলেন আর শুধু ব্যাংকে জমা করে রাখলেন, বাড়ি ও গাড়ি করলেন, এটার নাম সফলতা নয়।

কিছুই দান করলেন না, কামাই করে রেখে মারা গেলেন। সবাই এসে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে গেল। ইচ্ছা মতো এদিক সেদিক খরচ করল। খারাপ কাজে ব্যয় করল। এর দ্বারা আপনার লাভ তো হবেই না। উল্টো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, গোনাহ হবে। এজন্য কামাই করে রেখে যাওয়া সফলতা নয়, আল্লাহর পথে মানব কল্যাণে খরচ করার মধ্যেই সফলতা।

চার.
আল্লাহর নাজিলকৃত কিতাবগুলোর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা। ৩০ পারা কোরআন আল্লাহ তায়ালা নাজিল করেছেন। এর মধ্যে বিন্দু পরিমাণ কোনো সন্দেহ নেই। এই কোরআনের প্রতি একিন-বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। কোরআনের আগেও আল্লাহ তায়ালা তাওরাত, যবুর, ইঞ্জিল ইত্যাদি ছোট-বড় ১০৪টি কিতাব নাজিল করেছেন। সেগুলোর ওপরও বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।

পাঁচ. আখেরাতের প্রতি একিন ও বিশ্বাস করতে হবে। মরতে হবে, মৃত্যুর পর আল্লাহর সামনে আমাকে উপস্থিত হতে হবে। কবরের মধ্যে মুনকার-নকির ফেরেশতা আসবে। প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে। হাশরের ময়দানে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। যাবতীয় ভালো-মন্দ কাজের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দিতে হবে। মোট কথা, আখেরাত, মৃত্যু, হিসাব-নিকাশ, বেহেশত-দোজখ ইত্যাদি মানতে হবে, অন্তরের অন্তস্তল থেকে বিশ্বাস রাখতে হবে। তবেই সফলকাম হওয়া যাবে।

মোট কথা, আল্লাহ তায়ালা বলেন, এ পাঁচটি গুণ যদি কেউ অর্জন করতে পারে, তাহলে সে সফলকাম। তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়েতের ওপর আছে। পক্ষান্তরে যাদের মধ্যে এই গুণগুলো নেই, তারা ব্যর্থ। সফলতা ও ব্যর্থতার মাপকাঠি দুনিয়া নয়, দুনিয়ার চাকচিক্যও নয়। সফলতার মাপকাঠি হলো দ্বীনের ওপর চলা, দ্বীন মানা। আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করা। মৃত্যু-আখেরাত ইত্যাদি বিশ্বাস করা।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিল মাদরাসা, বগুড়া
অনুলিখন : মুহাম্মাদ আশরাফুল আলম

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.